জার্মানবাংলা২৪ ডটকম: বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আমাকে সাজা দেওয়ার জন্য এখানে আদালত বসানো হয়েছে। এখানে ন্যায়বিচার নেই। ইচ্ছামতো বিচার হচ্ছে। তাছাড়া আমি অসুস্থ, বারবার এখানে আসতে পারব না। আপনাদের যা মন চায়, যতদিন ইচ্ছা সাজা দিতে পারেন।
খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, ‘আমার বাম হাতে সমস্যা, নাড়াতে পারি না। পায়ে সমস্যা, পা ফুলে গেছে। দাঁড়াতে পারি না। ডাক্তার বলেছে, পা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। এখানে ডাক্তারের রিপোর্ট আছে, দেখলে বুঝতে পারবেন আমি কতটা অসুস্থ।’
মামলার শুনানির আগের দিন আদালত স্থানান্তর করতে গেজেট জারি করায় ক্ষোভ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই মামলায় শুনানির জন্য আজকের দিন তো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু একদিন আগে তড়িঘড়ি করে আদালত স্থানান্তর করে গেজেট দেওয়া হয়েছে। আমার সিনিয়র আইনজীবীরা এখানে আসেনি। এটা জানলে আমি আসতাম না।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাকে সাজা দেওয়ার জন্য এখানে আদালত বসানো হয়েছে। ন্যায়বিচার বলে কিছু নাই। অবিচার হচ্ছে। কথা বলা যায় না। আপনার যা খুশি সাজা দিয়ে দেন।’
এর আগে এদিন বেলা সোয়া ১২টার কিছু পরে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। আর বেলা ১১টা ৭মিনিটে বিচারক আদালতে উপস্থিত হন। এর আগে বেলা ১২টা ১৩ মিনিটে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ার বসিয়ে কয়েকজন নারী কারারক্ষী তাকে আদালতে নিয়ে আসেন। তার পরনে ছিল হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি, চোখে কালো চশমা। হুইল চেয়ারে বসা অবস্থায় তার পায়ের ওপরের অংশ থেকে সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল।
আদালতে বসার এজলাসের সামনে তার জন্য একটি চেয়ার ও ছোট একটি টেবিল রাখা হয়। টেবিলের ওপর একটি টিস্যু বক্স ও পানির বোতল রাখা ছিল। কিন্তু মামলার বিচারকাজ চলাকালে পুরোটা সময় তিনি হুইল চেয়ারে বসে ছিলেন। আর তার পাশে গৃহকর্মী ফাতেমা পানির বোতল ও একটি শপিং ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এদিন শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আজ মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়। এরপর থেকে অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়াকে এখন পর্যন্ত আদালতে হাজির করা যায়নি। তার অসুস্থতা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কারাগারে আদালত বসানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনটি যথাযথভাবে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে আইনজীবীদের অবহিত করেছি।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
মামলাটিতে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।
মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।