জার্মানবাংলা২৪ ডটকম, ঢাকা, ২৬ জুন: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করায় দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতলববাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন সরকারি দলের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। একইসঙ্গে তিনি আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা রোধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় অর্থমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ সেলিম বলেন, ‘কিছু মতলববাজ বুদ্ধিজীবী বলে এই বাজেট অবাস্তব; বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তারা সবসময় ভাঙা রেকর্ড বাজাতে থাকে। তারা বুদ্ধিজীবী নন, আমি বলবো মতলববাজ; তারা সুযোগসন্ধানী। বাজেট হতে পারল না, টেলিভিশনের পর্দা ফাটিয়ে দিলো।’
নাম ধরে সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, ‘ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। উনি ওয়ান-ইলেভেনের মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে ক্যান্টনমেন্টে বসে দুটো বাজেট দিয়েছেন। সংসদকে সেদিন কারাগার, আদালত বানিয়েছিল। তার কাছ থেকে বাজেট সম্পর্কে শিক্ষা নিতে হয়। আরেকজন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। প্রতিদিন আমাদের ছবক দেন। ওয়ান-ইলেভেনের আগে এনজিও প্রতিনিধি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত। যখন সংবিধানের বাইরে কেয়ারটেকার সরকার হলো, মইন-ফখরুদ্দিনকে ধরে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি হয়ে জেনেভা চলে গেলো। এদের কথা শুনে আমাদের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে! এরা হলো মতলববাজ, সুবিধাভোগী। এদেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই।’
ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের পরামর্শদাতা ছিলেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইলেকশন করলে নাকি বৈধ হয় না। বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া সিটে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে এখন বলেন–বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করা ঠিক হয় নাই। এটা মেনে নেওয়া যায না।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম বলেন, ‘ব্যাংক খাতে কিছু অনিয়ম আছে, গুরুত্ব বিবেচনা করে ববস্থা নিতে হবে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। যা তাদের মূলধনের ছয়গুণের বেশি। এটা হতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কী করে জানি না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য, ঋণ আদায় করার জন্য এমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আপনি (অর্থমন্ত্রী) নিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩২ শতাংশ। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনার (অর্থমন্ত্রীর) সব প্রকল্প ভেস্তে যাবে, যদি ব্যাংক ভেঙে পড়ে, ব্যাংক ভেঙে গেলে অর্থনীতির অনেক অসুবিধা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবার জন্য আইন সমান। কিন্তু আপনি কিছু কোম্পানিকে যে সুযোগ দিয়েছেন, তা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। ৫০০ কোটি টাকার ওপর যারা ঋণ নিয়েছে, ১১টি গ্রুপ কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা– এটা কেন দিলেন জানি না। এ টাকা জনগণের। আপনি শুধু সেটা রক্ষা করবেন। আপনি আইন ভঙ্গ করে তাদের এ সুযোগ দিতে পারেন না। এভাবে চললে অর্থনীতিতে মারাত্মক সংকট দেখা দেবে। এটা ঠিক নয়। এক পরিবারে চারজনকে পরিচালক করতে আইন সংশোধন করছেন, এটা কেন? দুর্নীতি-অনিয়ম বাড়বে। এটা করা উচিত নয়। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করেন। একই ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালক হচ্ছে। দুটি ব্যাংকের বেশি একজন পরিচালক হতে পারবে না। হলে অনিয়ম-দুর্নীতি হবে। কিছু লোকের দুর্নীতি-অপকর্মের দায় সরকার বা দল নিতে পারে না।’
জার্মানবাংলা২৪/এসআর