জার্মাবাংলা২৪ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে চীন। শুক্রবার বেইজিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র বৈঠকে এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এদিকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার প্রস্তুত বলে মনে করে চীন।
গত বছরের আগস্টে রাখাইনে তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে খুন, ধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের মতো নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলে আখ্যা দিলেও মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে আসছে চীন। সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওই অভিযান চালানো হয়েছে বলে করা মিয়ানমারের দাবিকে সমর্থন করছে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চীন।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে গত নভেম্বরে বাংলাদেশের পর গত মে মাসে জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার আগ্রহী নয়। এমন পরিস্থিতিতে চীন সফরে রয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ২৮ জুন বেইজিং সফরে যান তিনি। ৩০ জুন পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের কথা রয়েছে তার। শুক্রবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক করেন মাহমুদ আলী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা এখনও আতঙ্কিত। রাখাইনে ফেরার জন্য তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়। তারা নিজেদের গ্রামে ফিরতে চায়, কোনও শিবিরে না। তাদের অবশ্যই জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দিতে হবে।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে বাংলাদেশে অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থা সম্পর্কে চীনকে অবহিত করেন মাহমুদ আলী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের সক্রিয় সহযোগিতা চেয়েছেন। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমার যাতে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে সে জন্য চীনের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারের রাখাইনে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনে সহযোগিতার পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছেন। রাখাইনে পুনর্বাসনে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে বাড়ি নির্মাণ ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে চীন প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে বলেও জানিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সফরের যৌথ ঘোষণা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে স্বাক্ষরিত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অর্জিত সাফল্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন। আলোচনার মধ্যে আরও স্থান পেয়েছে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াং বলেন, আমি জোরালোভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের দিক থেকে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যিকারভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া দেখতে আগ্রহী। বিশেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রথম ধাপের শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরা দেখতে চাই।’
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা দেওয়া ছাড়াও তারা গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে। এই প্রক্রিয়ায় এরইমধ্যে ফিরে আসা শরণার্থীদের জন্য মিয়ানমারকে অস্থায়ী বাড়ি নির্মাণের সরঞ্জাম এবং বাংলাদেশে তাঁবু এবং অন্যান্য মানবিক উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওয়াং ই বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জোরালো প্রচেষ্টায় এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া খুব দ্রুত শুরু হবে বলে আমাদের বিশ্বাস রয়েছে।