অনলাইন ডেস্ক: মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সুচি বলেছেন, নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করার এখন উপযুক্ত সময়। শুরু থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে টালবাহানা করে আসছে মিয়ানমার।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ভ্রমণের পর অং সান সুচি এমন কথা বলেছেন। তবে এর আগে জাতিসংঘকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। এনিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, চাপের মুখেই হয়তো মিয়ানমার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অথবা এটা তাদের নতুন চালও হতে পারে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সফরকারী প্রতিনিধিদলের সাথে সোমবার সন্ধ্যায় এক বৈঠকের পর সুচির অফিস থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘শরণার্থীরা’ যাতে ‘নির্ভয়ে’ রাখাইনে ফিরতে পারে তা নিশ্চিত করা তার সরকারের পক্ষে সুবিধে হবে যদি বিদেশিদের এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যায়।
সুচি বলেন, এ ব্যাপারে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) এবং জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার(ইউএনএইচসিআর) সাথে একটি চুক্তি করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধিদলের সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে করে সুচি তার বিবৃতিতে এমন কথাও বলেছেন, এটি একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা। গণতান্ত্রিক মিয়ানমারে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। যারা ঘরবাড়ি হারিয়ে পালিয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের জোর চেষ্টা করতে হবে, সহিংসতার মূল কারণগুলো দূর করতে হবে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত বলেন, সফরকারী কূটনীতিকরা সুচি এবং মিয়ানমারের সেনা প্রধানকে স্পষ্ট করে বলেছেন রাখাইনে নির্যাতন, হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত না করলে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিসি) বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এর আগে জাতিসংঘের একাধিক কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘কপি-বুক’ জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছে।
গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ এবং হত্যার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সেনা-কর্মকর্তাদের আইসিসিতে বিচার হলে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করা যায়।
জাতিসংঘের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সাথে কথাবার্তা চলছে এবং তার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে একটি চুক্তি হতে পারে। তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
যদিও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সেনাবাহিনী এখনও মিয়ানমারে ক্ষমতার উৎস এবং সেদেশের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারাই নেন। এছাড়া, ফেরার শর্ত হিসাবে নাগরিকত্বের যে দাবি রোহিঙ্গারা করছেন সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতির কোনো ইঙ্গিত মিয়ানমার এখনো দেয়নি। তথ্যসূত্র: বিবিসি।