জার্মানবাংলা২৪ ডেস্ক: গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং অপরাধপ্রবনতা হ্রাসে আরো ৪৫০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। চীনে তৈরি ক্যামেরাগুলো বসানোর স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হবে। যাতে করে সেখান দিয়ে যাতায়াতকারী গাড়িগুলোর প্লেটের নম্বর চিহ্নিত করা যায় এবং লোকজনের চেহারা স্পষ্ট বোঝা যায়।
ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের পুলিশ বক্সের পাশেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মহাসড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখবেন একজন অতিরিক্ত এসপি।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হবে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, মহাসড়কে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে যেসব যানবাহন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বরত সদস্যদের সংকেত না মেনে চলে যাবে সেসব যানবাহনগুলোর নম্বর সিসি ক্যামেরায় শনাক্ত করে পরের চৌকিতে ওয়াকিটকির মাধ্যমে জানানো হবে। যাতে পরবর্তী তল্লাশি চৌকিতে পুলিশ ওই গাড়িটিকে আটক করতে পারে। এছাড়াও নম্বর প্লেটবিহীন গাড়িগুলো চিহ্নিতকরণ এবং ঢাকায় কোনো অপরাধ করে যাওয়া গাড়িগুলোকে চিহ্নিত করে ওই গাড়িগুলোকে আটকের ব্যবস্থা করবে পুলিশ। এছাড়াও যেসব পয়েন্টে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হয়ে থাকে সে পয়েন্টেও ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরা বসানোর ফলে যাতায়াতকারীদের নিরাপত্তা আরো বেশি নিশ্চিত হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে পুলিশের ডিআইজি (হাইওয়ে) মো. আতিকুল ইসলাম জানান, হাইওয়ের নিরাপত্তা আরো বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন স্থানে আরো প্রায় ৪৫০টি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। হাইওয়ের পুলিশ বক্সের পাশেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সেই ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র আরো জানায়, যেসব স্থানে ক্যামেরাগুলো বসানো হবে সে স্থানগুলো হচ্ছে- ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত। এইসব মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার পর পর পুলিশ বক্সের পাশেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে। স্থানীয় পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখবে ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। এছাড়াও প্রত্যেকটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে ওয়াকিটকি ও মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে। মহাসড়কে কোনো অনিয়ম পেলেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তল্লাশি চৌকির দায়িত্বে থাকা পুলিশের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে তারা বিষয়টি আপডেট জানাবেন।
সূত্র জানায়, এই ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে মহাসড়কের যানজট, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য, নাশকতা এবং বিভিন্ন রকমের অপরাধ কর্মকাণ্ড। প্রায় সময় কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যানবাহন থামিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ক্যামেরার মাধ্যমে দোষী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ। মহাসড়কের অনেকস্থানে পুলিশের তল্লাশি চৌকি রয়েছে। অনেক সময় দুর্বৃত্তরা পুলিশের হাতে আটকের ভয়ে সংকেত না মেনে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যায়। তখন আর তাদের ধরতে পারে না পুলিশ। বেশির ভাগ গাড়িগুলোর রং চটা ও নম্বরপ্লেটবিহীন থাকে। আবার গাড়ির নম্বরপ্লেট থাকলেও সেই নম্বরগুলো প্রায়ই ভুয়া হয়। এতে অপরাধীকে শনাক্ত করতে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় পুলিশকে। যেসব গাড়ি পুলিশের সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাবে সেগুলো দ্রুত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরের তল্লাশি চৌকিতে জানাবে পুলিশ। পরের তল্লাশি চৌকি ওই গাড়িটিকে আটক করবে। এছাড়াও ওই গাড়িগুলো যাতে বিকল্প পথ দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানানো হবে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা যেকোনো উৎসব পার্বণে মহাসড়কের যানজট সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে গাড়িতে থাকা হাজার হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন। কোনো কোনো এলাকায় এবং কী কারণে যানজট হচ্ছে তা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুলিশ শনাক্ত করবে এবং সেখানকার পুলিশ বক্সকে অবহিত করবে। পুলিশ সেই তথ্যের ভিত্তিতে মহাসড়কে যানজট নির্মূলে কাজ করবে।
এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যারা যানবাহনে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করবে তাদেরও চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।