মোহাম্মদ নুরুল আলম, ফ্রান্স: সিলেটের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন, ফ্রান্স এর আয়োজনে ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার ফ্রান্সের প্যারিসে একটি হলরুমে প্রায় সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে বিপুল উতসাহ উদ্দীপনা ও জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত “সিলেট উৎসব”।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন এর বিশ্বব্যাপী এই উৎসব পালনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা, কলকাতা, নিউ ইয়র্ক ও টরেন্টোর পরে প্যারিসে এই উৎসব পালিত হয়। ঐদিন প্যারিস ও তার পার্শবর্তী এলাকায় সন্ধ্যা ৬ ঘটিকা পর্যন্ত যন্ত্রচালিত গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে নির্ধারিত সময়ের কিছুটা বিলম্বে অনুষ্ঠান শুরু হয় ।
সিলেট উৎসব অনুষ্টানের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত চিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ তত্ত্বধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, Campaign for Popular Education এর নির্বাহী পরিচালক, Education watch এর সদস্য সচিব, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের এর আজীবন সদস্য জনাবা রাশেদা কে চৌধুরী সন্ধ্যা ৬ ঘটিকার সময় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন করেন।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ফ্রান্স এর সভাপতি হেনু মিয়া’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেনের সঞ্চালনায় – প্রথমে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন এসোসিয়েশনের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাফিজুর রহমান ও অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ট্রেজারার আজাদ মিয়া।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব কাজী ইমতিয়াজ হোসেন । চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল হারামাইন গ্রুপ অব কোম্পানি, চেয়ারম্যান এন আর বি ব্যংক, বিশিষ্ট সমাজ সেবক, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য জনাব মাহতাবুর রহমান নাসির ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইতালি ও যুক্তরাজ্যের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, ফ্রান্স বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও ফ্রান্সে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী সহ আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ফ্রান্সের কার্যনির্বাহী কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য “সিলেট উৎসব” অনুষ্টানের প্রধান অথিতি জনাবা রাশেদা কে চোধুরী, এরপর উপস্থিত সবাই ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন এবং সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সম্মাননা স্বারক প্রদান পর্ব শুরু হয়। রাষ্ট্রে, শিক্ষায়, প্রবাসী কল্যানে ও সমাজে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জনাবা রাশেদা কে চোধুরী, জনাব কাজী ইমতিয়াজ হুসেন, জনাব মাহতাব উদ্দিন নাসির, জনাব মুহিবুর রহমান, জনাব টি এম রেজা, জনাব ফারুক খান, জনাব অলি আহমেদ শামীম সহ মোট ৯ জনকে সম্মাননা স্বারক প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, “জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকা’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের শুভেচ্ছাবার্তার মাধ্যমে এরকম একটি প্রাণবন্ত উৎসব আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, তিনি এসোসিয়েশনের বিশ্বব্যাপী যে সেবা কার্যক্রম রয়েছে তা উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন এবং নানা রকম গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরেন, বিশেষ করে তিনি সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহন নিশ্চিত করণে সর্বোচ্চ গুরুত্তারোপ করেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধ কল্পে সবাইকে সংঘবদ্ধ ভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিহত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। যাতে করে কোন মেয়েকে অল্প বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে না হয়, সে বিষয়ে সকল বাবা মা কে ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির ভাষণে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল হারামাইন গ্রূপ অব কোম্পানি, চেয়ারম্যান এন আর বি ব্যাংক, বিশিষ্ট সমাজ সেবক, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য জনাব মাহতাবুর রহমান নাসির বলেন প্যারিসে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের জন্য নির্দিষ্ট একটি দপ্তর স্থাপন করে প্রবাসীদের কল্যানে কাজ করার জন্য তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন এবং অনুষ্ঠানে ফ্রান্স প্রবাসীদের উপস্তিতিতে অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এখানে পুনরায় আসার আশ্বাস প্রদান করেন।
ফ্রান্স এ অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশের উন্নয়নে সিলেট অঞ্চলের জনগণের অবদানের বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য এবং জালালাবাদ এসোসিয়েশনকে সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে জালালাবাদ এসোসিয়েশন ফ্রান্স ও সিলেট বিভাগের ইতিহাস ঐতিহ্য ভিত্তিক দুটি ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্টরি প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল বাংলাদেশ থেকে আসা জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী পলাশ ও ফ্রান্সের স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় জমকালো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এক পর্যায়ে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী “ধামাইল” নাচে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দের অংশ গ্রহণে এক আনন্দঘন মুহূর্তের সূচনা হয়, সব মিলিয়ে দর্শকদের উপচে পড়া উপস্থিতিতে “সিলেট উৎসব” যেন প্যারিসের বুকে এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত হয়েছিল।
অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ অতিথি জনাব মাহতাবুর রহমান নাসেরের সৈজন্যে সোনার বাংলা রেস্টুরেন্টে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।