জার্মানবাংলা ২৪ ডটকম: স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর বিশ্ব গণমাধ্যম আলজাজিরা’তে সাক্ষাৎকার দেয়ার পর নিজ বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ফটোগ্রাফার এবং দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল আলমকে।
শহীদুল আলমের ফটোগ্রাফি এজেন্সি দৃকের এক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, রোববার (৫ আগস্ট) রাতে ধানমন্ডির তার নিজ বাসভবন থেকে সাদা পোশাকের লোকজন রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় একটি গাড়িতে করে তাকে উঠিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রমনা ডিভিশনের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (এডিসি) আব্দুল্লাহেল বাকী জানান, শহীদুল আলমের পরিবার থানায় এ ব্যাপারে রিপোর্ট করেছেন। তবে তিনি বলেন, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি, আর আমরা এই ঘটনার ব্যাপারে কিছু জানি না। আমরা এ অভিযোগটি তদন্ত করে দেখছি।
এদিকে টানা স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চির ধরাতে ৫ আগস্ট সরকার দলীয় সমর্থকদের পূর্ব পরিকল্পনাই ছিল বটে। ওই দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী-ছাত্রীরা দলে দলে সাইন্সল্যাব এলাকায় জড়ো হতে থাকে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূণ আন্দোলনের সংবাদ ও ছবি সংগ্রহের সময় রাজধানীর নিউমার্কেট, সাইন্সল্যাব, জিগাতলা, শাহবাগ, ধানমন্ডি এলাকায় সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা নগ্ন হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আহত সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, সাংবাদিকদের বেধড়ক পেটানো হয়েছে, ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ডাটা মুছে দেয়া এবং ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত বেশকিছু সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার।
আহত সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সংবাদ সংগ্রহের সময় তাদের ওপরই ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।
আহত সাংবাদিকরা হলেন, এপি’র এম এ আহাদ, দৈনিক বণিক বার্তার পলাশ শিকদার, জার্মানবাংলা টুয়েন্টিফোর ডটকম-এর শামস রহমান, নিউজ পোর্টাল বিডি মর্নিং আবু সুফিয়ান জুয়েল, দৈনিক জনকণ্ঠের জাওয়াদ ও দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র ফটোগ্রাফার সাজিদ হোসেন ও প্রতিবেদক আহম্মেদ দীপ্ত।
এছাড়া, কয়েকজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারের ওপরও হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহতরা হলেন রাহাত করীম, এনামুল হাসান, মারজুক হাসান, হাসান জুবায়ের ও এন কায়ের হাসিন।
আহত সাংবাদিকের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুরে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থেকে সাইন্সল্যাব হয়ে সিটি কলেজের সামনে দিয়ে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড গিয়ে ধানমন্ডির ২/এ ঘুরে ফের সাইন্সল্যাবের দিকে আসার সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেন। এ সময় সাংবাদিকরা সেই হামলার ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠি, রড, পাইপ দিয়ে হামলা করে। হামলাকারীদের কারও মাথায় হেলমেট ও মুখে রুমল বাঁধা ছিল।
নিউজ পোর্টাল বিডি মনিং-এর সাংবাদিক আবু সফিয়ান জুয়েল বলেন, ‘হামলাকারীরা সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগ বলে আমারা জানতে পেরেছি। তাদের অনেকের মাথায় হেলমেট ছিল।’
হামলাকারীদের পরিচয়ের বিষয়ে দৈনিক বণিক বার্তার ফটোগ্রাফার পলাশ শিকদার বলেন, ‘আমি সিটি কলেজের সামনের পুলিশ বক্সের সামনে ছবি তুলছিলাম, তখন এপি’র ফটোগ্রাফার এম এ আহাদকে মারধর করা হচ্ছিল। আমি তাকে বাঁচাতে যাই। তখন হামলাকারীরা আমাকেও মারধর করে। লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘হামলাকারীরা সবাই ছাত্রলীগ। আমরা এই হামলাকারীদের বিচার চাই।’
দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র ফটোগ্রাফার সাজিদ হোসেন বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’
জার্মানবাংলা টুয়েন্টিফোর ডটকম এর বার্তা প্রধান (বাংলাদেশ) শামস রহমান জানান, ‘পেশাগত কাজে নিউ মার্কেট থেকে সাইন্সল্যাবের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঢাকা কলেজের উল্টা পাশে রাস্তায় এক পথচারীকে বেধড়ক পিটাচ্ছিল ছাত্রলীগের ছেলেরা। ওই ছবি তুলার সময় তাকে লাঞ্ছিত করে এবং জোর করে তার মোবাইলের সমস্ত ডাটা মুছে দেয়।
এদিকে পুলিশের সামনেই সাংবাদিকদের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এমন কোনও অভিযোগ পাইনি।’