শামস রহমান: বাঙালি আসলে বিপদে পড়েই শিখে। কিন্তু শিক্ষা নেয় সাময়িক। আবার ভুলে যায়; ফিরে অাসে অপরাধ আর নৈরাজ্যে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে নিজস্ব অাইন ও প্রশাসন। শুধু না মানা আর দুর্নীতির কারণেই আজকের খুদে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ওদের বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণ। যা দেখে ঘুমন্ত রাষ্ট্রযন্ত্র জেগে উঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তারা শিক্ষা নিচ্ছে। যে কাজ ৪৭ বছরে বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি তা মাত্র ৫ দিনেই করে দেখিয়েছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। যদিও সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব ওদের নয়। কিন্তু পরিস্থিতি ওদের বাধ্য করেছে। সাধারণ মানুষ যখন সত্য বলার সাহস হারিয়ে নির্বাক হয়ে যাচ্ছে, তখন রুখে দাও অন্যায় স্লোগানে আগামী দিনের বাংলাদেশকে নেতৃত্বের শিক্ষা দিতে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবারও রাজধানীতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ছিল প্রতিবাদে সোচ্চার।
তাদের অংশগ্রহণ ছিল আগের চার দিনের চেয়ে অনেক বেশি। সকালে উত্তরা, ফার্মগেট, রামপুরা, সায়েন্স ল্যাব, বনানী, যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় রাস্তায় শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও ঘাতক চালকদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দেয়।
তারা চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষাও শুরু করে। কাগজপত্র ঠিক ছিল না এমন চালকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলও তারা আটকে দেয়। বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকস্থানে রিকশা ও গাড়ি শৃঙ্খলভাবে চলাচল করতে বাধ্য করে। একই দৃশ্য আজ বৃহস্পতিবারও ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে।
রাজধানীর অনেক স্থানেই ট্যাক্সি, কার রিকশাকে সারিবদ্ধভাবে চলাচল করতে দেখা যায়। এমন অজস্র ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কর্মকাণ্ডে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই বাহবা কুড়োচ্ছেন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের গাড়ি, এমনকি একজন মন্ত্রীর গাড়িকেও এক অর্থে ছাড় নিতে হয়েছে ছাত্রদের কাছ থেকে। মন্ত্রীও হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অনুরোধ। দিনভর রোদবৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলন করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রদের মাধ্যমে সড়কে যে শৃঙ্খলার আশার আলো দেখা গেছে তা যেন কোনোভাবেই নস্যাৎ না হয়ে যায়। এ বিষয়ে সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিবেন বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।