ইদ্রিস আলম: সড়কের বেহালদশা গণমাধ্যমে তুলে ধরলেই কেবল টনক নড়ে সংশ্লিষ্টদের। এর বাইরে নিজ উদ্যোগে নগরীর রাস্তার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা খুবই কম অনুভব করে কর্তৃপক্ষ। সড়ক মেরামতে বা সংস্কারে প্রতি বছর বিপুল অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তা ব্যবহার করা হয় না সঠিকভাবে। আর সে কারণে সড়ক সংস্কারের অল্পদিনেই ভেঙ্গে হয় পুরানো অবস্থা। ফলে সৃষ্টি হয় নতুন-পুরাতন গর্ত। আর বর্ষা এলে পানি জমে থাকা এসব গর্তের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত গাড়ি চলাচলে, সেগুলো দিনে দিনে আকারে হয় বড়। রূপ নেয় মরণ ফাঁদে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে এমন অনেক সড়ক, যেখানে চলতে হয় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে।
নগরীর উত্তরাংশে নতুন সিটিতে যুক্ত হওয়া এলাকাগুলোর বেশিরভাগের চিত্রই তেমন। অনুসন্ধানে ধরা পড়ে রাজধানীর তুরাগের হরিরামপুর উইনিয়নের রাস্তাঘাটের বেহালদশা। এলাকাবাসীর দূর্ভোগ চরমে। উত্তর সিটির আওয়তায় আনা হলেও, করপোরেশনের নেক নজর পড়েনি হরিরামপুর। উন্নয়নের কোনো ছোঁয়াই যেন লাগেনি, হরিরামপুরের কোনে এলাকায়। সেই কারণেই দুর্দশায় কাটছে তুরাগের জীবনমান। কয়েক লাখ মানুষের বসবাস এখানে।
সরেজমিনে- বাউনিয়া, বাদালদী, উলুদাহা, চান্দুরা, মান্দুরা, কামারপাড়া, রানাভোলা, চন্ডলভোগসহ প্রায় সবখানে চোখে পড়ে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জমে হাঁটু পানি। এসব এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু স্কুল কলেজ ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। বৃষ্টিতে পানি জমলেই ঠিকমত স্কুল-কলেজে যাওয়া হয় না শিক্ষার্থীদের। হাঁটু পানি মাড়িয়ে সঠিক সময় কর্মস্থলে যেতে পারেন না অনেকেই। রাস্তায় জমে থাকা পানির অজুহাত শুনতে নারাজ কর্তব্যক্তিরা। তাই হারাতে হয় জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।
রাস্তাঘাটের করুণ দশায় রিক্সা বা অন্য কোন বাহন যেতে রাজি হয় না। জোরাজুরিতে রাজি হলেও, ভাড়া হাঁকে দু থেকে তিনগুন বেশি। রাস্তাঘাটের বেহালদশায় এসব এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও মন্দা।
এলাকার বেশ কিছু বাড়ির মালিক হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাঙাচুরা রাস্তার কারণে ভাড়াটিয়া পাওয়া যায় না। মাসের পর মাস খালি রাখতে হয় ফ্ল্যাট। ফলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ওঠানো বিলাসবহুল বাড়িগুলো পড়ে আছে ফাঁকা।
বাউনিয়ায় দেখা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা নাজুক। কোথাও পিচ ঢালাইয়ের নমুনাও চোখে পড়বে না।
ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ডাঃ মামুন বলেন, রাস্তার যে অবস্থা তাতে দোকান ভাড়াতো দুরের কথা, ভাতের ব্যবস্থাও দূষ্কর হয়ে পড়েছে। বর্ষায় পানি জমলে, থাকে বছরজুড়ে। এসব দেখার কেউ নেই। দোকানের দরজায় পানি, ক্রেতা আসবে কোথা থেকে বলুন?
বাউনিয়ায় স্থায়ীভাবে বসাবাস করেন ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অবস্থা দেখে মনে হয় এলাকায় কোন মেম্বার চেয়ারম্যান নেই। যদি থাক তো, তাহলে হাঁটু পানিতে আমাদের চলতে হতো? দেখার কেউ নেই। শুধু ভোট আসলেই নেতাদের অভাব থাকে না। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোন মতো ভোট নিতে পারলেই যেন বাচে।
এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকা নতুন করে উত্তর সিটিতে অন্তভুক্ত হয়েছে, তা আপনারা নিশ্চয় জানেন। সে কারণে কিছুটা সমস্যা আছে, তবে খুব শিগগিরই শুরু হবে উন্নয়ন কাজ। এখন আমাদের হাতে কোন ক্ষমতা নাই। আমরা তো নিজের টাকা দিয়ে কাজ করাতে পারব না।
চরম হতাশায় এলাকার অনেকেই বলেন, বড় কষ্টের বিষয় হলো এলাকার এমপি হলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। উনি স্বরাষ্ট্র ও ডাক-টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। তারপরও যখন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি, তখন সিটি হলেই কি হবে? অফিসে যেতে রাস্তায় নামলেই রিক্সা ভাড়া ২০ টাকার জায়গায় দিতে হয় ৫০ টাকা। যা অনেকেরই সম্ভব হয় না। আর বাড়তি টাকা না চেয়েও তো উপায় নেই? রাস্তার যে কন্ডিশন তাতে আরো বেশি চাওয়া উচিত।
অথচ কয়েক গজ সামনে গেলেই উত্তরা। সেখানে দেখা যায় উল্টো চিত্র। একদম ভালো রাস্তা কেটে ফের নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। যার কোনো প্রয়োজন নেই বললেই চলে। কিন্তু যেখানে পায়ে হাঁটার মতো ব্যবস্থা নেই, সেদিকে যেন চোঁখ যায় না কর্তৃপক্ষের।
গেল বছর জুলাইয়ে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন করে যুক্ত হয় ১৬টি ইউনিয়নের ৩৬টি ওয়ার্ড। এ নিয়ে দু`সিটিতে মোট ওয়ার্ড হল ১২৯টি। সীমানাও বেড়েছে দ্বিগুণ।