ইতালি? ঠিক আছে। তুরিন? না, রোম। ওই হলো, একই কথা। ১১ এপ্রিল? না, ১০! বার্সেলোনা টাইম মেশিনে চেপে বসেছিল ঠিকই। কিন্তু হিসেবে একটু গরমিল হলো। ১ দিন এদিক-ওদিক। এ ছাড়া আর সবকিছু প্রায় হুবহু ফিরিয়ে আনতে পারলেন মেসি-সুয়ারেজরা। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল ইতালিতে এসে এভাবেই একে একে তিন তিনটা গোল হজম করেছিল বার্সা। সেবারও ম্যাচ ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। সেবারও ছিল ইতালিয়ান কোনো ক্লাব, জুভেন্টাস। শুধু বার্সা সমর্থকেরা একটু ধন্দে পড়বেন, কোন বার্সা বেশি জঘন্য ছিল। কালকের, নাকি এক বছর আগের?
কালকেরটির পক্ষেই ভোট পড়বে বেশি। শুধু টাটকা স্মৃতি বলে নয়; বার্সা এই মৌসুমেও অনেক বাজে ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু এই রকম জঘন্য ম্যাচ সার্জিও বুসকেটস তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে খেলেননি। সে কথা বার্সা মিডফিল্ডার নিজে বলছেন। অথচ রাত জেগে টিভিতে এই ম্যাচ দেখার উৎসাহ হয়তো অনেক বার্সা সমর্থকই পাননি। প্রথম লেগে দল জিতেছে ৪-১ গোলে। ফিরতি লেগ তো অর্থহীন! যদি দেখতেই হয় ম্যান সিটি-লিভারপুল দেখা যাক। বিশেষ করে শুরুতেই গোল করে, একের পর এক আক্রমণ শাণিয়ে; প্রথমার্ধের শেষ প্রান্তে রেফারির ভুলে একটি ন্যায্য গোল থেকে বঞ্চিত হয়ে সিটি যেমন অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের গল্প টাইপ করতে শুরু করেছিল।
কিন্তু মোহাম্মদ সালাহর ‘অ্যাওয়ে গোল’টা সব উৎসাহ নিভিয়ে দিল। সিটির আর আশা নেই। আর ঠিক তখনই বার্সা সমর্থকেরা রিমোট ঘুরিয়ে রোমার ম্যাচে আসতেই আবিষ্কার করলেন, এডিন জেকোর শুরুতে এনে দেওয়া ১-০ ব্যবধান ২-০ হয়ে গেছে। পেনাল্টি থেকে মাত্রই গোল করলেন ড্যানিয়েল ডি রসি, প্রথম ম্যাচে আত্মঘাতী গোলে দলকে ডুবিয়েছিলেন ১৭ বছর ধরে পেশাদার ফুটবল খেলা এই পুরোনো সৈনিক। সেই তিনিই জাগিয়ে তুললেন আশা। দুই লেগ মিলিয়ে ব্যবধান তখন ৩-৪। আর একটা গোল করলেই হয়। কারণ রোমার অ্যাওয়ে গোল আছে। ৪-৪ সমতা তাদের সেমিফাইনালে তুলে দেবে। যে সেমিফাইনালে ১৯৮৪ সালের পর থেকে তারা ওঠেনি!
পুরো ম্যাচে বার্সাকে এক ইঞ্চি জায়গা না দেওয়া রোমা সেই তৃতীয় গোলটিও পেয়ে গেল। এবার কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁয়ে দুর্দান্ত গোল করে প্রথম লেগের আরেক আত্মঘাতী পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলেন মানোলাস। ম্যাচের ঘড়িতে তখন ৮২ মিনিট। বার্সা আরও ৮+৪ মিনিট সময় পেল। কিন্তু ১২ মিনিট কেন, কাল বার্সা আরও ১২০ মিনিট পেলেও পারত না। শেষ আটের ড্রয়ের পর যে রোমাকে পেয়ে বার্সা সবচেয়ে খুশি হয়েছিল, সেই তারা দেখিয়ে দিল, কীভাবে দ্বিতীয় সারির শক্তিমত্তার দল নিয়ে কাঁধে কাঁধ লড়িয়ে খেলতে হয়।
২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল ভর করল ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিলে। অসহায় বার্সা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে কীভাবে একে একে তিন গোল জড়াল তাদের জালে। সেটি তবু প্রথম লেগ ছিল। কাল ছিল ফিরতি লেগ। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে নকআউট পর্বে তিন বা এর বেশি গোলের ঘাটতি পূরণ এর আগে হয়েইছিল মাত্র দুবার। এর মধ্যে একটি প্রত্যাবর্তনের রূপকথা বার্সা নিজেই জন্ম দিয়েছিল। গতবার পিএসজির বিপক্ষে। এবার বার্সা অন্য প্রান্তে। বার্সেলোনা কখনোই চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপিয়ান কাপে প্রথম লেগ ৩ গোলে জিতে বিদায় নেয়নি। এবার হলো।
টানা তিনটার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় আরও একবার বার্সা সমর্থকদের অনিঃশেষ হতাশার মুখে দাঁড় করিয়ে দিল। লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নতুন ইতিহাস গড়লেও যে হতাশা মুছবে না।