গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আর স্বজনহারা পরিবারগুলোকে প্রতিনিয়ত তীব্র বেদনায় কাতর হতে হচ্ছে। তবে ওই হামলার পর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
আজ রোববার সরকারের পক্ষ থেকে হোলি আর্টিজানে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আনুষ্ঠানিকভাবে সমবেদনা জানানো হয়। সেখানে বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা বলেন, জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানের পর সরকার এখন মনে করছে, জঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। বড় কোনো হামলার আশঙ্কা নেই, হলেও প্রতিরোধের সক্ষমতা আছে।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে গতকাল উপস্থিত ছিলেন হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেন, অবিন্তা কবির, ইশরাত আখন্দ ও তারিশি জৈনের পরিবারের সদস্যরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাঁদের হাতে সম্মাননাপত্র তুলে দেন। ফারাজের ভাই যারেফ আয়াত হোসেন, অবিন্তার মামা তানভীর আহমেদ, ইশরাত আখন্দের ভাই আলী হায়াৎ আখন্দ ও তারিশি জৈনের স্বজন নীরেন সরকার সম্মাননাপত্র ও ১৫ হাজার ইউরো গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান খান বলেন, হোলি আর্টিজানে হামলার আগে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। হোলি আর্টিজানে এক দিনে ২০ জনকে হত্যা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যাঁদের সন্তানেরা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, তাঁদের নিজের সন্তান বলে পরিচয় দিতেও ঘৃণা করেন অভিভাবকেরা। যারা বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে, তাদের মৃতদেহ দিনের পর দিন পড়েছিল, কেউ দেখতে আসেননি। তারপর পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
অনুষ্ঠানে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার তদন্ত ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানানো হয়। সেখানে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ও র্যাবের অভিযানগুলো নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করা হয়। জঙ্গিবাদ নির্মূলে অভিযানের বাইরে সচেতনতামূলক কাজগুলো সম্পর্কেও অবহিত করা হয়।
ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিবাদ দমনে যে ভূমিকা রেখেছে তার প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, তাঁর জন্ম এখানে, তিনি আমৃত্যু এ মাটিতেই থাকবেন। তাঁর সন্তানেরা, দৌহিত্ররা সবাই এ মাটির সন্তান, এখানে থাকবেন। সে কারণেই দেশটাকে নিরাপদ রাখা জরুরি।
রাজারবাগের ওই সম্মাননা অনুষ্ঠান লতিফুর রহমানকে স্মৃতিকাতর করেছে বলেও জানান তিনি। তিনি মনে করেছেন ১৯৭১ সালে রাজারবাগের সেসব তরুণের কথা, যাঁরা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা পরিষ্কারভাবে জানতেন, সঠিক পথ কোনটি, কী করতে হবে। ফারাজও যখন নিহত হন, তিনি ২০ বছরের তরুণ। তিনিও বুঝতে পেরেছিলেন কোনটি ঠিক, কোনটি ভুল। সে কারণে মুসলিম ও বাংলাদেশি হওয়া সত্ত্বেও বন্ধুদের ফেলে নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে আসেননি। লতিফুর রহমান বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি হলে কী করতাম। সত্যি বলতে কি আমার এই সাহস নেই। আমার পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, প্রতিদিন তীব্র বেদনায় আমরা কাতর হই। একই সঙ্গে আমি গর্বিত ফারাজের মতো একজন আমার পরিবারে জন্মেছিল বলে। আমার উত্তরসূরিরাও তাঁকে নিয়ে একইভাবে গর্ব অনুভব করবে।’
অনুষ্ঠানে নিরাপত্তাসচিব মোস্তফা কামালউদ্দীন, সুরক্ষাসচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম ও র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আনোয়ার লতিফ খান।