গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার। এ জন্য সকাল থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ব্যস্ততা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর প্রার্থীরা সেখানে আসছেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে। হঠাৎ দুপুরের দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানুষের ভিড় বেড়ে গেল কয়েক গুণ। বেশ বড় একটি নৌকা নিয়ে আসে মিছিল।
নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি তখন মিছিলের সামনে থাকা দুই নেতার দিকে। একজন অভিজ্ঞ, আরেকজন বয়সে তরুণ। তাঁরা হলেন—সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান এবং আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। এই দুই নেতাই এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। শেষে দলের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দিতে দুজন একসঙ্গে আসায় অবাক হন অনেকেই।
সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ছিলেন আজমত উল্লা খান। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গী হয়ে আজমত জানান, মনোনয়ন না পেলেও দলের জন্যই কাজ করে যাবেন তিনি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর জাহাঙ্গীর বলেন, তাঁদের মধ্যে কোনো দূরত্ব নেই, ঐক্য আছে। দুজনই দলের জন্য কাজ করছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থাকা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীর কথার সুরও এক। তাঁরাও ঐক্য চান। কয়েকজন নেতা-কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, এই দুই নেতা একসঙ্গে কাজ করলে নৌকাকে কেউ হারাতে পারবে না। জয় নৌকারই হবে।
২০১৩ সালের প্রথম গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আজমত উল্লা। সে সময় জাহাঙ্গীর আলম দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একপর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ওই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে তিনি কাজ করেছিলেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা আছে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও প্রায় ২০ হাজার ভোট পান তিনি।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আজ ১২ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ চলবে আগামী রোববার ও সোমবার।
সচেতন নাগরিক কমিটি গাজীপুর শাখার সহসভাপতি মুকুল কুমার মল্লিক বলেন, মনোনয়ন জমা দিতে আওয়ামী লীগের দুই নেতার একসঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি উদারতা ও রাজনৈতিকভাবে শুভ লক্ষণ। আজমতের মনের মধ্যে হয়তো কিছু ক্ষোভ থাকবে, তবে তা তিনি কাটিয়ে উঠবেন। এমন আচরণ সব দলের হওয়া দরকার বলে মনে করেন মুকুল।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে তার পরদিন। ভোট গ্রহণ হবে মে মাসের ১৫ তারিখে।
আজমত উল্লা খান মনে করেন, তাঁর অভিজ্ঞতা যদি জাহাঙ্গীরের কাজে লাগে, তবে গাজীপুরবাসী উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় দলের প্রতি অনুগত। দল যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, মেনে নিয়েছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। দলের প্রয়োজনে যেকোনো সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, এবারের নির্বাচনে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন। ২ এপ্রিল থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদে ১৮ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯৭ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৮৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জেলা পরিষদ, পুলিশসহ সবাই সহযোগিতা করছে।